উদ্বোধনের একদিন পর আজ রোববার ভোর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। এরপর থেকেই সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান যানবাহনের চাপে মাওয়া প্রান্তে যানজট তৈরি হয়।
দুপুর পর্যন্ত বহু মানুষকে সেতুর উপর গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলতে এবং ভিডিও করতে দেখা যায়।
বহু মানুষ সেতুর উপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত যানবাহন থামিয়ে নেমে পড়ে।
পুলিশের টহল ভ্যান এসে তাদের সরিয়ে দিলেও কিছুক্ষণ পর আবার একই অবস্থা তৈরি হচ্ছিল।
এমনকি পুলিশের বাধা অমান্য করে বহু মানুষকে পায়ে হেঁটে সেতুর উপর উঠে পড়ে।
তিনি বলছিলেন, তার স্বপ্ন পদ্মা সেতু হেঁটে পার হওয়ার। তিনি শরিয়তপুরের জাজিরার প্রান্ত থেকে উঠে পদ্মা সেতু দিয়ে হেঁটে মাওয়া প্রান্তে এসে আবার হেঁটেই জাজিরা প্রান্তে ফেরত গেছেন।
পুলিশ বলছে, তারা বাধা দেয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করছে।
কিন্তু এতো মানুষ এসে উঠে পড়ছে যে, তাদের সবাইকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। বিবিসিকে বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান।
ভোরবেলা মাওয়া প্রান্তে যানজট
সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, ভোর ৬টার কিছু আগে যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেয়ার পর সেতুর মাওয়া প্রান্তে যানজট সৃষ্টি হয়।
এছাড়া প্রথম দিন সেতু পার হতে আগ্রহীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়াও যানজটের একটা কারণ বলে উল্লেখ করছিলেন তিনি।
অনেকেই প্রথমবার সেতুতে উঠার জন্য ভোররাত থেকেই মাওয়া প্রান্তে এসে অপেক্ষা করছিলেন। ফলে সেতু খুলে দেয়ার সাথে সাথে যে যানজট হয় সেটা ছিল তীব্র। পরে অবশ্য তীব্রতা কমে আসে যানজটের। কিন্তু কমবেশি যানজট দুপুর পর্যন্ত দেখা গেছে।
কোন গাড়িতে কতো টোল দিতে হবে?
পদ্মা সেতুর উপর যাতায়াতকারী যানবাহনের টোলের হার আগেই নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সেই তালিকা অনুযায়ী টোলের হার :
মোটরসাইকেল – ১০০ টাকা
কার ও জিপ – ৭৫০ টাকা
মাঝারি বাস – ২০০০ টাকা
বড় বাস – ২,৪০০ টাকা
মাইক্রোবাস – ১,৩০০ টাকা
মিনিবাস – ১,৪০০ টাকা
ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) – ১,৬০০ টাকা
মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) – ২,১০০ টাকা
মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) – ২,৮০০ টাকা
বড় ট্রাক (তিন এক্সেল পর্যন্ত) – ৫,৫০০ টাকা
ট্রেইলার – ৬,০০০ টাকা
গত মে মাসে যখন এই টোলের প্রস্তাব করা হয়, তখন এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
অনেকেই ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।
অনেকে যমুনা সেতুর সঙ্গে টোলের হারের পার্থক্য তুলে ধরেন।
ফেরিও চালু রাখা হয়েছে
শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে নিরাপত্তা ইস্যুতে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হলেও রোববার সেতুর পাশাপাশি ফেরিও চালু রাখা হয়েছে কয়েকটি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন আগেই জানিয়ে রেখেছে, পদ্মা সেতু চালু হলেও শিমুলিয়া ঘাট থেকে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল অব্যাহত থাকবে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বিবিসি বাংলাকে গত মে মাসে বলেছিলেন, ‘সেতু চালু হলেও সেখানে ফেরি চলাচল একেবারে বন্ধ হবে না। বিকল্প বা জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ঘাট থাকবে। সেই সঙ্গে আমরা দুটি ফেরি চালানোর কথা ভাবছি। খুব ভারী যেসব যানবাহন আছে, সেগুলো পদ্মা সেতুর বদলে ফেরি দিয়ে চলাচল করতে পারবে।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের ফেরি চলাচল এখনকার মতো অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশে বর্তমানে ফেরির যে টোল হার রয়েছে, তার ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘একটি ভালো সময় দেখে আমরা নতুন টোল হার কার্যকরের ঘোষণা দেবো। বর্তমানে যেখানে যে ফেরির টোল যা রয়েছে, তা থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে।’
এখন পর্যন্ত শিমুলিয়া ঘাট অথবা পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে করে পার হতে একটি কার বা জিপকে ৫০০ টাকা টোল দিতে হয়।
নতুন টোল হার নির্ধারিত হলে সেখানে ৫৯০ অথবা ৬০০ টাকা হতে পারে।
সূত্র : বিবিসি